alo
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১২ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

একজনের বদলে চাকরি করছেন আরেকজন

প্রকাশিত: ২০ জুলাই, ২০২৩, ০১:২০ পিএম

একজনের বদলে চাকরি করছেন আরেকজন

নেত্রকোনা প্রতিনিধি: দেড় দশকের বেশি সময় ধরে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়া জাহানারা আক্তার বিউটি নিজে কোনো কাজ না করেও নিয়মিত বেতন তুলে যাচ্ছেন। কর্মস্থলে তার জায়গায় কাজ করেন খালেদা আক্তার নামে এক নারী। কর্তৃপক্ষ সব জেনেও অদৃশ্য কারণে ব্যবস্থা নেয়নি।

এদিকে, বিউটি আয়া পদে থেকে ২৫ হাজার টাকা বেতন তুলে মাত্র তিন হাজার টাকায় খালেদা নামে ওই নারীকে দিয়ে আয়ার কাজ করাচ্ছেন। এরআগে একই বেতনে ইয়াসমিন নামে এক নারী দুই বছর কাজ করেছেন। বেতন বাড়ানোর চাপ দিতেই তাকে বাদ দেওয়া হয়। এভাবে দেড় দশকের বেশি সময় ধরে অন্য নারীদের দিয়ে আয়ার কাজ করাচ্ছেন বিউটি।

বিউটির পরিবর্তে কর্মরত খালেদা আক্তারের বাড়ি উপজেলার বিরামপুর গ্রামে। তার স্বামী বিল্লাল মিয়া পেশায় একজন মোটরসাইকেল চালক।

নাম প্রকাশ না করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফ জানান, আয়ার চাকরি নিলেও বিউটি ধনী পরিবারের। তার আত্মীয়-স্বজনও বড় বড় পদে সরকারি চাকরি করে। তাই এ কাজ করতে তার আত্মসম্মানে লাগে। সেকারণে চাকরির শুরু থেকে টাকা দিয়ে লোক রেখে তার জায়গায় কাজ করান। তবে প্রভাবশালী আত্মীয়দের কারণে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন নার্স নাম প্রকাশ না করে বলেন, আয়া বিউটি বিরাট প্রভাবশালী। অফিসিয়াল কোনো ঝামেলায় পড়লে আমাদেরকেও তিনি রক্ষা করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের অধিকাংশই আয়া বিউটিকে চিনেন না।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২৮ অক্টোবর মোহনগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আয়া পদে যোগদান করেন জাহানারা আক্তার বিউটি। বর্তমানে তার বেতন ২৫ হাজার টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিউটির বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। তার স্বামী শাহ জালাল কিবরিয়ার বাড়ি ময়মনসিংহে। গত রমজানে তার স্বামী মারা যায়। কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন থেকেই বিউটি মোহনগঞ্জের কলেজ রোডে বসবাস করেন।

খালেদা আক্তার বলেন, আমি গরীব মানুষ। তাই তিন হাজার টাকায় আয়ার কাজে রাজি হয়েছি। আমাকে বলেছে, আরও অনেকে কাজ কাজ করতে আগ্রহী। তুমি এই টাকায় কাজ না করলে অন্যজনকে নিয়ে আসবো।

অভিযুক্ত আয়া জাহানারা আক্তার বিউটি অন্যদের দিয়ে কাজ করানোর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, চাকরির শুরুতে নিজেই কাজ করেছি। ৩-৪ বছর ধরে কোমরের হাড়ে ব্যথার কারণে উপুড় হয়ে কাজ করতে পারি না। তাই অন্যজনকে দিয়ে কাজ করাচ্ছি। তবে আমি নিজেও উপস্থিত থাকি। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি এতদিন মানবিকভাবে দেখেছেন বলেই এটি সম্ভব হয়েছে।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. পার্থ সরকার বলেন, বিষয়টি আগে জানা ছিল না। দুই-তিন আগে সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনে বিউটিকে বলা হয়েছে নিজের কাজ নিজে করার জন্য। আগে বিউটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতোই না। এখন অন্য একজন থাকলেও বিউটি উপস্থিত থাকেন। টুকটাক কাজও করেন। বিষয়টি সিভিল সার্জনকে অবহিত করা হয়েছে। এদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাও (ইউএইচএফপিও) বিউটিকে ডেকে নিজের কাজ নিজে করতে হবে বলেছেন। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষে সঙ্গে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর দুই-তিন দিন ধরে বিউটি নিজেও কর্মস্থলে উপস্থিত থাকছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. রেহানা পারভীন বলেন, আয়া বিউটির বিষয়ে অবগত হয়েছি। সিভিল সার্জন স্যারকে ঘটনাটি অবহিত করা হয়েছে। আমি ঢাকা ট্রেনিংয়ে আছি। এসে স্যারের সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিষয়টি অবহিত করলে জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেলিম মিঞা বলেন, এ বিষয়ে ইউএইচএফপিও সহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কেউ কিছু আমাকে জানায়নি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।

নিউজনাউ/কেআই/২০২৩

X