alo
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১২ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সিজিএসের প্রতিবেদন

দেশে ৬০ শতাংশ মানবাধিকার কর্মী হুমকির সম্মুখীন হন

প্রকাশিত: ২৩ জুলাই, ২০২৩, ০১:১০ এএম

দেশে ৬০ শতাংশ মানবাধিকার কর্মী হুমকির সম্মুখীন হন

নিউজনাউ ডেস্ক: দেশের ৬০% মানবাধিকার কর্মী মানবাধিকার রক্ষার কাজে বিভিন্ন হুমকির সম্মুখীন হন এবং তাদের কাজের ওপর বিধিনিষেধ দেয়া হয় এবং ব্যক্তিগতভাবে তারা শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। এমন তথ্য উঠে এসেছে সেন্টার সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) – এর চার মাস ব্যাপী ‘চ্যালেঞ্জেস টু হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা থেকে। 

শনিবার (২২ জুলাই) ঢাকার একটি হোটেলে গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। অনুষ্ঠানে উক্ত গবেষণা প্রতিবেদন “হু ডিফেন্ডস দ্যা ডিফেন্ডার: দ্যা প্রেডিকামেন্ট অফ হিউম্যান রাইটস এ্যাক্টিভিস্টস ইন বাংলাদেশ” প্রকাশ করা হয়। 

গবেষণার মুখ্য গবেষক যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ও সিজিএসের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য ড. আলী রীয়াজ প্রতিবেদনটির সারাংশ তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র’র চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট জেড.আই. খান পান্না, নিউ এজ’র সম্পাদক নুরুল কবির, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)-এর অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন এবং সিজিএস- এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র , যুক্তরাজ্য, অষ্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের প্রতিনিধি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষক ও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।  

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান দেশের মানবাধিকার কর্মীদের জন্য আরও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের উপর জোর দেন। তিনি রাষ্ট্র ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি তুলে ধরে এর পরিত্রাণের জন্য আহ্বান জানান।  

বাংলাদেশে মানবাধিকার কর্মীদের অবস্থার বিষয়টি তুলে ধরে ড. আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘের ‘মানবাধিকারকর্মী-সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র’ কে স্বীকৃতি জানালেও মানবাধিকার কর্মীদের অধিকার রক্ষায় কোনো আইন প্রণয়ন করেনি। গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল তুলে ধরে তিনি জানান, “দুঃখজনকভাবে জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪৬% মানবাধিকার কর্মীরা দেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতিকে গুরুতর বলে বর্ণনা করেন। এছাড়াও, ৪২% কর্মী জানান সরকারী আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠান থেকে তারা বেশি বাধার সম্মুখীন হন। ৬০% কর্মীরা মানবাধিকার রক্ষার কাজে বিভিন্ন হুমকির সম্মুখীন হন এবং তাদের কাজের ওপর বিধিনিষেধ দেয়া হয় এবং ব্যক্তিগতভাবে তারা শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।’ 

ব্যারিস্টার সারা হোসেন মানবাধিকার কর্মীদের সার্বিক পরিস্থিতি বোঝার স্বার্থে আরও বৃহত্তর প্রেক্ষাপট থেকে গবেষণা করার পরামর্শ দেন। মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট আইন ও তার বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু আইনগত কাঠামো থাকলেই হবে না, তার যথাযথ প্রয়োগও থাকতে হবে। সংবিধানে শুধু ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (ডিএসএ) - এর সংশোধন নয়, বরং ঔপনিবেশিক আমল থেকে রয়ে যাওয়া আরও বিভিন্ন আইনেরও সংশোধন প্রয়োজন।  

অ্যাডভোকেট জেড.আই. খান পান্না দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশের কথা উল্লেখ করে বলেন, গণতন্ত্র এখন নিলামে উঠেছে, সেখানে ধনী ব্যবসায়ীরা টাকা দিয়ে তা কিনে নিচ্ছেন এবং এমপি-মন্ত্রী হচ্ছেন। তিনি মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে জানান, দেশ এখন ব্যবসায়ী ও আমলাদের হাতে চলে গেছে, রাজনীতিবিদরা আর দেশ চালাচ্ছেন না।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ গবেষণা প্রতিবেদন ও মুখ্য গবেষককে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং এ ধরনের গবেষণার মাধ্যমে মানবাধিকারের বিভিন্ন দিক উন্মোচন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এছাড়াও, তিনি স্পষ্ট করে জানান, জাতীয় মানবধিকার কমিশন সরকারি কোনও সংস্থা নয়, এটি রাষ্টীয় সংস্থা। 

তিনি আরও যোগ করেন যে, অনেকের মধ্যে এ বিষয়ে ভুল ধারণা থাকায় তারা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভালো কাজের সংবাদ প্রকাশ করে না। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিচারবহির্ভূত কর্মকান্ড ও বিদেশী নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তিনি জানান, যারা অপরাধী তারা যেই হোক, অপরাধী। তবে এর সাথে ভূ-রাজনীতির সম্পর্ক আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

নিউজনাউ/আরএইচআর/২০২৩

X