alo
ঢাকা, মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১১ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
তীব্র দাবদাহে লোডশেডিং

চার্জার ফ্যান-আইপিএস-জেনারেটরের দামে আগুন

প্রকাশিত: ০৯ জুন, ২০২৩, ০৩:২৯ এএম

চার্জার ফ্যান-আইপিএস-জেনারেটরের দামে আগুন

মেহেদী হাসান, ঢাকা: প্রবাদে আছে,‘কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ’। তীব্র দাবদাহের মধ্যে লোডশেডিংয়ে আইপিএস ও জেনারেটরে বিক্রেতাদের পৌষ মাস শুরু হয়েছে। বর্তমানে লোডশেডিংয়ের ভরা মৌসুমে আইপিএস-জেনারেটরের দামে যেন আগুন লেগেছে। সেইসাথে চার্জার ফ্যান, পাওয়ার ব্যাংকের দামও বেড়েছে কয়েগুণ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে কৃত্রিম সংকটকে পুঁজি করে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীরা যেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠছেন।

সরেজমিনে দেশের সর্ববৃহৎ রাজধানীর নবাবপুর রোড মার্কেট বাজারের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জেনারেটর ক্রয় করতে রাজধানীতে ছুটে আসছেন ক্রেতারা। মসজিদ-মাদরাসা, বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে করপোরেট অফিসের জন্য ক্রয় করছেন বিভিন্ন কিলো ভোল্টের জেনারেটর ও আইপিএস। সব কিলো ভোল্টের জেনারেটরের চাহিদা বেড়েছে। তবে ৩ থেকে ৫ কিলো ভোল্ট জেনারেটরের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।   

রাজধানীর নবাবপুর রোড মার্কেট ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য বলছে, বর্তমানে হোন্ডা ব্র্যান্ডের দুই কিলোওয়াট জেনারেটরের দাম প্রায় ৩৬ হাজার টাকা, যেটি এক বছর আগেও ছিল ২৪ থেকে ২৬ হাজার টাকা। বর্তমানে হোন্ডা ব্র্যান্ডের ৩ কিলোওয়াট জেনারেটরের দাম প্রায় ৪২ হাজার টাকা, যেটি আগে ছিল ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। বর্তমানে হোন্ডা ব্র্যান্ডের ৫ কিলোওয়াট জেনারেটরের দাম প্রায় ৭২ হাজার টাকা। যেটি আগে ছিল ৫২ থেকে ৫৫ হাজার টাকায়। এছাড়া টাইগার ব্র্যান্ডের ২ কিলোওয়াটের একটি জেনারেটরের দাম প্রায় ২৯ হাজার টাকা। আগে যেটি ছিল প্রায় ২২ হাজার টাকা। বর্তমানে টাইগার ব্র্যান্ডের ৩ কিলোওয়াটের জেনারেটরের দাম প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। যেটি আগে ছিল প্রায় ২৬ হাজার টাকা। বর্তমানে টাইগার ব্র্যান্ডের ৫ কিলোওয়াটের একটি জেনারেটরের দাম প্রায় ৬৫ হাজার টাকা। আগে যেটি ছিল ৪৮-৫০ হাজার টাকা।

এদিকে একই অবস্থা রয়েছে আইপিএসের ক্ষেত্রেও। গরমে ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি কোম্পানির আইপিএস ও ব্যাটারির দাম বাড়ছে। বাজারের তথ্যমতে, বর্তমানে রহিমা আফরোজের ২০০ এমপিআরের একটি ব্যাটারির দাম রাখা হচ্ছে প্রায় ৩২ হাজার ৫০০ টাকা। যেটি আগে ছিল ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। বর্তমানে হেমকো ব্র্যান্ডের ২০০ এমপিআর একটি ব্যাটারির দাম রাখা হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার ৫০০ টাকা। আগে যেটি ছিল ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। বর্তমানে ভলভো ব্র্যান্ডের ২০০ এমপিআরের একটি ব্যাটারির দাম রাখা হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার ৫০০ টাকা। আগে যেটি বিক্রি হতো ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায়। 

বর্তমানে লুমিনাসের একটি ১০৫০ ভিএ আইপিএসের দাম রাখা হচ্ছে ১৫ হাজার ৫০০ টাকা। আগে যেটির দাম ছিল ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা। লুমিনাসের ১৬৫০ ভিএ আইপিএসের বর্তমান দাম প্রায় ২৫ হাজার টাকা। আগে যেটি ছিল ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। একই অবস্থা অন্যান্য কোম্পানির আইপিএসের ক্ষেত্রেও। বর্তমানে মাইক্রোটেক ১০৫০ ভিএ আইপিএসের দাম রাখা হচ্ছে প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ টাকা। আগে যেটির দাম ছিল ৭  থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকা।

কারওয়ান বাজার থেকে হাসিবুল ইসলাম জেনারেটর কিনতে এসেছেন নবাবপুরে। তিনি নিউজনাউকে জানালেন, ৩ কিলো ভোল্টের একটি জেনারেটর কেনার জন্য আসলাম। এসে এ দোকান ও দোকানে ঘুরছি। আগের চেয়ে দাম বেড়ে গেছে। অবশেষে ৩ কিলো ভোল্টের একটি জেনারেটর ৪২ হাজার ৫০০ টাকায় কিনতে হলো।

এদিকে চাহিদা বাড়ায় বাজারে কিছু দোকানি নকল ব্র্যান্ডের জেনারেটর বেশি ভোল্ট দেখিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন বলেও অভিযোগ তুলছেন ক্রেতারা। ব্যাটারি কিংবা জেনারেটরের মোটরের মানের উপর সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে ক্রেতাদের। 

ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, কিছু কিছু অসৎ ব্যবসায়ী ব্র্যান্ড নকল করে কিলো বেশি দেখিয়ে বাড়তি দামে বিক্রি করেন। এতে গ্রাহকদের বাজে অভিজ্ঞতা হয়। গ্রাহকদেরই সচেতন হতে হবে। যেমন দেশে এখন জাপানের অরিজিনাল হোন্ডায় এর কোনো জেনারেটর আমদানি হচ্ছে না। কিন্তু বাজারে ঠিকই নকল হোন্ডার জেনারেটর বিক্রি হচ্ছে।

কামাল মেশিনারিজ অ্যান্ড টুলসের প্রোপ্রাইটর কামাল হোসাইন জানান, বর্তমানে জেনারেটরের মার্কেটে জমজমাট ব্যবসা। আগে কোনদিনই এমনভাবে বিক্রি হয়নি। সারাদেশের খুচরা বিক্রেতারা এখানে আসছেন আইপিএস জেনারেটর কিনতে। আগে ব্র্যান্ড থেকে ৫ কিলো ভোল্টের একটি জেনারেটরের দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। কয়েকটি কারণে মূলত জেনারেটরের দাম বেড়ে গেছে। একদিকে লোডশেডিং বেড়ে গেছে, অন্যদিকে ডলারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, পোর্টে ব্যয় বেড়ে গেছে, আবার চাহিদার কারণেও কিছুটা দাম বেড়ে গেছে।

গাজী আব্দুল হক নামের এক ব্যবসায়ী জানান , কয়েক দিনের লোডশেডিংয়ে বাসায় টেকা বড় দায়। বড় মানুষের সহ্য হলেও বাসায় ছোট বাচ্চাদের জন্য উপায় না পেয়ে একটি আইপিএস কিনলাম। ব্যাটারি আর আইপিএস মিলে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হলো।

রাকিবুল ইসলাম নামের এক চাকুরিজীবী জানান, এ বছর প্রথম থেকেই বিদ্যুতের সমস্যা শুরু হয়েছে, বাসায় বাচ্চাদের পাশাপাশি বৃদ্ধদের ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছে। ঘরে বাচ্চারা অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করে। এসি রেখেও লাভ নেই। বিদ্যুৎ না থাকলেও সবকিছুই অচল। তাই গরম থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে আইপিএস কিনতে এসেছি। আইপিএসের দামে মাথা খারাপ হওয়ার মতো অবস্থা।

জানতে চাইলে ইভা এন্টারপ্রাইজের মো. মাসুম জানান, বাজারে জেনারেটরের চাহিদা আগের তুলনায় বহুগুণ বেড়ে গেছে। প্রায় কয়েকগুণ চাহিদা বেড়েছে। আগে যেসব দোকানে সারা মাসে ২০-৩০টি জেনারেটর বিক্রি হতো, সেখানে এখন ১০০টির বেশি জেনারেটর বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রায়ই জেনারেটরের সংকটে পড়তে হচ্ছে।

গরম ও লোডশেডিং এ প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম যে সংকট তৈরি হয়েছে এই অবস্থা থেকে ঢাকাবাসীর মুক্তি হয়তো মিলছে না সহসা। লোডশেডিংয়ের বিদ্যমান পরিস্থিতি আরও দু’সপ্তাহ থাকবে  বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীও। আবহাওয়া অধিদপ্তরও বলছে, অস্বস্তিকর এই গরম আরও পাঁচ-ছয়দিন থাকবে। তবে এইসব সংকটকে কেন্দ্র করে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট চাইলে ভাঙতে পারে প্রশাসন। জনগনকে অন্তত এই আশাটুকু করতেই পারে।

নিউজনাউ/পিপিএন/২০২৩

X